শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১১

তোমাকে ভালোবাসি

           (যুগলদের প্রতি রইলো শুভ কামনা )

        
          এই লেখাটি পাওয়ার পর হয়তো তুমি ভাবছো কি না কী এটি। আমার বহুদিনের সঞ্চিত কথা মালার কিছু এটি। যদি তুমি মনে কর কোন আনাড়ীর স্বপ্নালেখ্য তবে তোমার কাছে হয়তো তায়, আর জেনে রেখ আমার কাছে এর থেকে সত্যি কিছু নাই।

           তোমার এক দৃশটিতে চেয়ে থাকা, বোর্ডের দিকে অথবা দূরে ...বাইরের দিকে জানালা দিয়ে, অথবা কোন অজানা দিকে...সব সবই ভালো লাগে আমার। টুনটুনি বা দোয়েলের মত  তোমার অস্থির দৃষ্টিপাত কাপুনি তোলে আমার প্রাণে।আবার কখনো হঠাৎ গম্ভীর, গালে হাত দিয়ে  চিরকালের ভাবুক হয়ে যাও।এসব কিছুই সবসময়ই ভালো লাগে আমার। কখনো বা আবার অযাথাই দাও মুচকি হাসি, তা আমার হৃদয়ে জাগায় জোয়ার। কখনও ক্লাশের ফাকে ফাকে দাঁতে নখ কাটা তুমি, এসব মুগ্ধ করে আমাকে। লেকচার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে যখন তুমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ো সে বাতাস  যে ঝড় তলে আমার প্রাণে তা কি তুমি জানো? অনেকক্ষণ চেয়ে থাকার পর খুব কষ্টে চোখের পাতা টেনে তোল তুমি, সে যে কী ভীষণ আলস্য তোমার; তুমি হয়তো জানো না আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তা কত সযত্নে দেখি আর মনে মনে কী যে খুশি হয়! তোমার কপাল জড়ো করে চাওয়া, কখনো হেসে কুটি কুটি হওয়া, সব, সব ভাল লাগে আমার। ক্লাশের ভ্যাপ্সা গরমে লেখার খাতা তুলে বাতাস খাওয়া দেখতে ভীষণ ভাল লাগে আমার।শীতে জড়োসড়ো হয়ে হাতে হাত ঘসে গালে তাপ দাও তুমি; তুমি কি জানো সে তাপ কতোটা উত্তাপ ছড়ায় আমার হৃদয়ে? কখনো তোমার ঠোঁটের কোণে হাঁসি,কখনো বা ঠোট চেপে ধরে হাসি আবার কখনো কখনো আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দোলায় আমাকে;সে হাসির বাণ বিদীর্ণ করে আমার প্রাণ। হোমওয়ার্কের কথা শুনে দাঁত-মুখ খিচিয়ে ওঠা দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে। ছল করে আড় চোখে চেয়ে দেখ আমি তোমায় দেখছি কিনা আবার না দেখার ভান করে সযত্ন অবহেলায় চুপচাপ বসে থাক তুমি; সব বুঝি আমি। আমার ভীষণ ভালো লাগে। চাতক পাখির মত তোমার অনবরত এদিক সেদিক চাওয়া, অকারণে পাশের, আগের-পিছের সহপাঠীর সাথে আলাপ জুড়ে দেওয়া, কানাকানি করা_এ সব; সব কিছু ভীষণ ভালো লাগে আমার। তোমার কারণে-অকারণে ব্যাগ হাতড়ানো, হাতের ঘড়িটা ঠিক আছে কিনা বারবার নেড়ে চেড়ে পরীক্ষা করে দেখা, বারবার ওড়না ঠিক করা, চিবুকে আঙ্গুল লাগিয়ে ধ্যানমগ্ন ভাবে লেকচার শোনা, মাঝেমাঝে দুই হাতের তালুতে গাল লুকানো,গভীর মনোযোগের সাথে বইয়ের পাতা উল্টানো-গভীর মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করি আমি।  বারবার কপাল থেকে বা মুখের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া চুল বিরক্তিভরে তোমার সরাণো দেখতে দারুণ লাগে আমার। তুমি হাসলে গালে টোল পড়ে তোমার;শুধু মুখ দিয়ে নয় , তুমি যখন হাসো ,তোমার সারা শরীরই হেসে ওঠে; তুমি হয়তো জানো না তখন তোমায় কত দারুণ দেখায়! আর তোমার অধরের নীচের ছোট্ট তিলটি নক্ষত্রের মতই জাজ্বল্যমান;আর তোমারই প্রিয় কপালের ছোট্ট কালো টিপে মনে হয়, রয়েছে যার এমন মুখখানা, তার পদনখেই আছে বোধয় কত চন্দ্রকণা।
          কথা বলার সময় তোমার কানের দুলের মৃদু স্পন্দন আমকে ভাসিয়ে নেই মেঘের দেশে।আমিও দুলতে থাকি কোন এক অজানা আনন্দে ।
অপরাজেও বাংলার বেদীতে তোমার পায়ের উপর পা তুলে বসাতে বিশেষ এক ভঙ্গী আছে যা কারও মাঝে আজও দেখিনি।সেখানে তোমার বান্ধবীদের সাথে নির্ভেজাল আনন্দময় আলাপন আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি।কখনো মধুর ক্যান্টিনে, টিএসসির বারান্দায়, কখনও বা ডিপার্টমেন্টের করিডোরে ফ্রেন্ডদের সাথে সহাস্য কোলাহল মুগ্ধ হয়ে দেখি আমি। দূর থেকে তোমার বেশি মরিচ দিয়ে ঝালমুড়ি খাওয়া দেখি; খেতে খেতে ঝালে উঃ আঃ শব্দ করা; আবার আমড়া  কিংবা কামরাঙ্গা খাওয়ার সময়  টকের তীব্রতায় চোখ-মুখ জড় করে ফেলা;সব, সব কিছু ভালো লাগে আমার।
        কখনো সাহস হয়নি তোমার কাছে গিয়ে আমার এই ভালো লাগার কথা বলার।জানি, আমি তোমার যোগ্য নয়, তায় তো আমি দূরে দূরে রই।তোমার জানার পর যদি আমায় হতে হয় বঞ্চিত, তবে আমার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হবে না।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ভালোলাগাকে আমি ধরে রাখতে চাই;বাস্তবে তোমায় পাই বা না পাই।আশা রাখি স্বপ্ন সত্যি হবে কোন একদিন।আর যদি তা না হয় তবে চাতকী যেমন অধরা চাঁদকে পাবে না জেনেও ভালোবাসে সারাক্ষণ আমিও না হয় তেমনি ভাবে তোমায় ভালোবেসে কাটিয়ে দেব আমার ছোট্ট এ জীবন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন