মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১১

♥ ♥ ♥ প্রেম তত্ত্ব ♥ ♥ ♥


গাছ বাদে ফুলের ঘ্রাণ কে কবে পেলো শুনি?
সাধক সে জন,পীর-দরবেশ, নয়তো ঋষি-মুণি।
দেহ বাদে প্রেমের কথা বলে যে জন
জেনে রেখ, মিথ্যা বলে সে, মিথ্যুক সে জন।
না ঘুমিয়ে স্বপ্ন যারা দেখে
তা স্বপ্ন নয় হে, সে যে দিবাস্বপ্ন
ভ্রান্তি তাহার চোখে-মুখে।
অংকের ভাষায়, মন হল দেহের এক জটিল ফাংশন।
জানা নেই আমার, এর থেকে কোন সত্য ভাষন।

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১১

আমার বন্ধু সোহেল

                                 “তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়? 
                      দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয় 
                                  তিলে তিলে তার ক্ষয়।।
                      আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়।’’

          হ্যাঁ দেখেছি।আমি মুকুল ঝরে যেতে দেখেছি। তবে কেবল মুকুলই নয়; আমি ফুটন্ত কলিও ঝরে যেতে দেখেছি। সোহেল কেবল মুকুল নয় সে সম্পূর্ণ ফুল হয়ে উঠতে যাওয়া বিকাশমান একটি কলি। সামান্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর একটু সুযোগ পেলেই সে ফুল হয়ে উঠতে পারে।

          আমি মোঃ সোহেল রানা’র কথা বলছি। আমার বন্ধু সোহেলের কথা বলছি।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র। আর ছয়টি মাস পার হলেই একজন গ্রাজুয়েট।কিন্তু হায়,ভাগ্যের কী নিদারুণ পরিহাস! এই পূর্ণিমা তিথির পূর্ণ চাঁদ উঠার আগেই তাকে গ্রাস করতে ছুটে এসেছে এক দুষ্টগ্রহ । সোহেলের কিডনীতে বাসা বেঁধেছে এক দূরারোগ্য ব্যধি।রোগটির নাম-Chronic Glomerulonephritis with Hypertension with End Stage Renal Failure on Heamo-dialysis.তার দুটি কিডনীই এখন অচল প্রায়।ডায়ালাইসিস করে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ছোট হয়ে গেছে তার কিডনী দুটি,ছোট হয়ে এসেছে তার পৃথিবী, কিন্তু বেঁচে থাকার আশাটা বড় বেশি তার।

           টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের এক দরিদ্র দিনমজুর মোঃ আব্দুস সামাদের বড় ছেলে সোহেল।বাবা-মার ঘামে ভেজা অর্থে আর তার নিজের প্রচেষ্টাই সে আজ এখানে। মিরপুরে এক মামার বাসায় থেকে টিউশন করে,কোচিং সেন্টারে ক্লাশ নিয়ে নিজের এবং তার আদরের একমাত্র ছোট বোনটির পড়াশুনার খরচ চালাতো সে। অনার্স শেষ হলেই একটা চাকরি করবে,বোনটির দায়িত্ব নেবে আর বাবা-মা কে ছুটি দেবে; এই তার আশা।তার জীবন তার মত করে গুছিয়ে নেবে সে।কিন্তু তার সে আশা আজ থমকে দাঁড়িয়ে গেছে।
তারাশঙ্কর সেই কবি’র মত করেই সোহেল বেডে শুয়ে আজ আমাকে প্রশ্ন করেছিল,
                            “হায়! জীবন এত ছোট কেনে!
                                    এ ভুবনে
                   জীবনে যা মিটল নাকো, মিটবে কি তা মরণে?’’
         আমি তার এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর করতে পারি নি। আমতা আমতা করে যা বলে ছিলাম তা কোন উত্তর নয়;শুধু সান্ত্বনার বাণী। আমি বলেছিলাম, ‘জীবন কোনো দিন শূন্যে গিয়ে থামবে না।তবে দূঃখ? হ্যাঁ, দুঃখ আছে। থাকবে।আর তা আছে বলেই মানুষ আশা দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে বিশ্বাস দিয়ে তার সঙ্গে বোঝাপাড়া করে বেঁচে থাকে। তোরও নিশ্চয় অসুখ সেরে যাবে।এ আর এমন কী! কিডিনী ট্রান্সপ্লান্ট করলেই তুই সুস্থ হয়ে যাবি।আগের মত ক্যাম্পাসে আসতে পারবি, আড্ডা দিবি ঠিক আগের মতই। একদম চিন্তা করবি না,আমরা আছি না তোর সাথে? জীবন তো এই রকমই-নানা বর্ণে বেদনায় রঞ্জিত এক উপন্যাসের মত। ’

          জানি না এটি সত্য না কোন মিথ্য প্রলোভন। তাকে নিয়ে সৃষ্টিকর্তার খেয়ালও আমাদের অজানা।শুধু জানি, আমার বন্ধুটি এ পৃথিবীর রং-রূপ-রস ঠিক মত না বুঝেই চলে যেতে বসেছে।এই জীবনটা ভালো কিংবা মন্দ কিংবা যা-হোক-একটা-কিছু সে কথাটাও বোঝার সময় পাচ্ছে না সে।জীবন তাকে সে সুযোগ দিচ্ছে না।কখন সে জীবনের মাঝে মগ্ন হয়ে জীবন কে উপভোগ করতে পারবে না আর।

       জীবনের ধারা চলতে চলতে তার যে সব চিহ্ন বিছিয়ে যায় সেগুলোর স্মৃতিচিহ্ন তার আশেপাশের মানুষদের কে বড় কষ্ট দেয়।আমরাও সেরকম কষ্টে ভুগছি।তার সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা আজ বারবার মনে পড়ছে,চোখের সামনে ভেসে উঠছে একেবারে জীবন্ত হয়ে।আমরা প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে শ্যাডোর নিচে আড্ডা দিতাম।সোহেল বেশ রসিক ছিল।কথা কম বলতো;কিন্তু কথায় অনেক উইট থাকতো।তার বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকে আমরা হাসতে হাসতে ফেটে পড়তাম।

           আমরা ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র।অনেক ট্রাজেডি পড়েছি এবং পড়ছি আমরা ।কিন্তু সোহেলের মত মর্মান্তিক জীবন্ত ট্রাজিক হিরো জীবনে দেখি নি।প্রকৃতির হাতে নির্মম-নির্দয় ট্রাজিক পরিণতি।

           সেই সোহেল আজ অসুস্থ।মারাত্বক ভাবে অসুস্থ।কিন্তু বেঁচে থাকার আকুলতা তার প্রবল।বাঁচার একমাত্র উপায় কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করানো।এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ।সে অর্থ তার কিংবা তার পরিবারের নাই।তাই বলে কি সোহেল অর্থাভাবে,চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে? তা কখনো হতে দেব না আমরা।জীবন মানুষের একটাই; সেই জীবন কে এভাবে খরচ হতে দেব না আমরা।
                           '' মানুষ মানুষের জন্যে জীবন জীবনেরজন্যে
                       একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?''

প্রিয় আজম খান

(উৎসর্গঃ বাংলার পপগুরু আজম খান কে)

কি আর লিখব কবিতায়?
যখন সমগ্র জাতি শোকার্ত
তোমাকে হারানোর বেদনায়।
শহীদ মিনারে  হাজারো মানুষের ভিড়ে
যে সোকগাথা রচিত হয়েছে
তা কি আমি লিখতে পারবো
মাত্র কয়েক লাইন কবিতায়?

আমি জসীমউদ্দীন লেনে
কতদিন পিছু নিয়েছি গোপনে।
তুমি জানতেও পারোনি তা।
তোমার লম্বা লম্বা পা ফেলে
যখন হাটতে উদাস ভঙ্গিতে
এক হাতে ঝোলা ব্যাগ, অন্য হাত পকেটে
সবজি বাজার ঘুরে মাছের বাজারে যেতে না যেতেই
একদল কৌতূহলী ভক্ত যেত জুটে
কলোনির সেই কমবুঝ ছেলেগুলো
আজও হয়তো চেয়ে থাকে
এই বুঝি তুমি চলে আসবে
ক্ষণিক পাশে বসবে,
কিংবা খেলবে তাদের সাথে।
...
...
রেললাইনের বস্তির সেই ছেলেটি
বড় হয়ে যখন তোমায় খুজবে
কি বলবো তাকে? তা তো  বলনি।
প্রতিদিন কত আলাল-দুলাল
হারায় চাঁনখারপুলে
তাদের খোঁজে কে বল আর গান গাবে
অমন হৃদয় খুলে?
বিড়ি আর গাঁজার ধোয়ার মাঝে
তুমি প্রথম যেদিন গেয়েছিলে গান
সেদিনই বুঝেছিল সবাই
তুমি হবে সাধারণ জনতার প্রাণ।
সালেকা,মালেকা,  আর পাঁপড়িরা
তোমার কারণে ভাষা পেল নীচজরা।

যতদিন শোনা যাবে বাংলা ভাষায় গান
ততদিন থাকবে তুমি প্রিয় আজম খান।

আমি নারী

সুন্দরীরা সব অবাক
আমার কি আছে এমন?
মডেল কন্যাদের মত না হয়েও
কিভাবে আমি অনেক পুরুষের স্বপন?
জবাবে আমি যখন কিছু বলি
তারা ভাবে আমি মিথ্যার ঝুলি।
আমি বলি-
পুরুষের আকর্ষন আমার সুডৌল বাহু।
আর আমার কোমোরেরে দুলনি।
নারী সুলভ আড়ষ্ঠ পদক্ষেপ
কিংবা আমার বাঁকা চাহনি।
আমি একজন নারী
পৃথিবীর মহাঘটিয়সী
বহু ঘটনার জন্মদান কারী।

আমি হাঁটাহাঁটি করি ঘরে
ঠিক তোমাদের মত করে।
কিন্তু কোন পুরুষের সম্মুখে
ঠাঁয় দাঁড়ায়ে যায়।
নত মস্তকে সে কাচুমাচু মুখে
তোষামদ করে আমায়।
আশেপাশে ঘুর ঘুর করে
পুরুষ মৌমাছি্রা যেমন ঘোরে
রানীর সাথে সঙ্গম লিপ্সায়।
আমি বলি-
এত কিছুর কারণ
আমার বাঁকা ভ্রুর নাচন।
কিংবা আমার রহস্যভরা হাসি।
অথবা চপল পা দুখানির কারসাজি।
আমি একজন নারী;
পৃথিবীর মহাঘটিয়সী
বহু ঘটনার জন্মদান কারী।

পুরুষের চোখেও আমি বিস্ময়।
দূর থেকে চেয়ে দেখে,
প্রচুর চেষ্টা করে,
তবুও স্পর্শের স্পর্ধা নাহি কুলায়।
নারী হৃদয়ের চির রহস্য
যখন দেখাতে চাই।
তারা বলে,
হে নারী, কুল নাহি পায়।
আমি বলি-
এত কিছুর কারণ
আমার পিঠের মসৃন আবরণ।
অথবা আমার যত্ন করা মুখখানি।
কিংবা বুকের উত্থিত মাংসপিন্ডসহ
আমার যৌবনপুষ্ট দেহখানি।
আমি একজন নারী;
পৃথিবীর মহাঘটিয়সী
বহু ঘটনার জন্মদান কারী।

এখন তুমি বুঝবে
কেন আমি এত দুর্বিনীত।
অনুরোধ কিংবা তোষামোদ ছাড়ায়
এক ভ্রুর নাচনে, কাজ যখন হয় শত।
তোমার পাশ দিয়ে আমি যখন হাঁটি
গর্বে তোমার বুকটা যায় ফাটি।
আমি বলি-
এত কিছুর কারণ,
আমার চঞ্চল হাটন।
অথবা আমার চুলের মদির ঘ্রাণ।
কিংবা আমার নরম হাতের ছোয়ায়
আছে যখন বহু সঞ্জিবনী প্রাণ।
কারণ আমি একজন নারী।
পৃথিবীর মহাঘটিয়সী
বহু ঘটনার জন্মদান কারী।
[Maya Angel-এর একটি জনপ্রিয় কবিতা থেকে থিম এবং ফর্ম ধার নিয়েছি।]

লুকানো ব্যথা

তোমরা আমায় হাসতে দেখো
গাইতে দেখো গান,
কেউ কখনো  দেখেছো কি
এ বুকে ব্যথার পরিমান?

সবুজ ঘেরা পাহাড় দেখো
কখনো পেতেছো কি তাতে কান?
কঠিন শিলার কঠিন হৃদয়
তারও আছে গোপন অভিমান।

সেই পাহাড়ের মর্মব্যথা
লুকানো সব গোপন কথা,
অশ্রু হয়ে ঝরে তারা।
মনোহরা ঝর্ণাধারা!

হে মনমিতা

হে মনমিতা, চেয়ে দেখ আমার চোখের তারায়
তোমার চোখে আমার ছবি,
আর আমার চোখে খুজে পাবে তোমায়।
এই আমি কথা দিচ্ছি তোমায়।
এক বার যদি কিস দাও ঐ পানির গ্লাসে
আর কোনদিনও মুখ দেব না বিয়ার কিংবা ভোদকায়।
যে তৃষা জাগিয়েছো তুমি আমার এ প্রাণে,
হাউজে কাওসারের পানিতে মিটবে না তা
কিংবা মিটবে না তা  গঙ্গার পবিত্র জল পানে।
সেদিনের দেওয়া সেই গোলাপ ফুলের তোড়া
কোন ভণিতা কিংবা লৌকিকতা নয়,
সবটুকু আমার বিশুদ্ধ প্রেমে মোড়া।
দিয়েছিনু এ আশায় নয় যে কেবল তুমি নেবে ঘ্রাণ
বরং নিঃশ্বাসের সাথে ছুড়ে দেবে তুমি মদনের বান।
তোমার নিঃশ্বাসের সৌরভে হল সে ফুল সৌরভময়
তারই মঝে আমি, হে মনমিতা,খুজে পেলাম তোমায়।                        

বৃষ্টি ভেজা প্রেম

প্রকৃতির এই নাটকের মঞ্চায়ন।
শুধু আমাদের দুজনের জন্যই
আজকের এই পুরো আয়োজন।

ভার্সিটির বটতলায় বসে আছি
বেশ কাছাকাছি
হ্যা, সাথে সেও আছে।
দুজনে পাশাপাশি
করে ঘেষাঘেষি।

হঠাৎ শুরু হল বৃষ্টি।
গাছের নীচে, পাতার ফাকে
ফোটা ফোটা বৃষ্টি
ভেজা শরীর,শিরশিরে বায়ু
যতসব অকারণ অনাসৃষ্টি।

শুরু হল আনচান
ব্যকুল হৃদয় শুধু দেয় টান।
হাতে হাত রেখে
নেমে পড়লাম রাস্তায়।
কলা ভবনে মোড় নিয়ে,
শ্যাডোর ভিতর দিয়ে
থামলাম এসে
মল চত্বরের শেষটায়।

আমাদের বরণ করে নিতে
পথ জুড়ে ছড়ানো ছিলো কৃষ্ণচূড়ার লালদল
মাঝে মাঝে উপর থেকে
ছিটিয়ে দিচ্ছিল গাছেরা ফুল সজল।

মনে হল কৃষ্ণ আমি
রাধা আমার পাশে
সেই আদিম আকর্ষণে
তনুমন  তখন হাসে।

ভেজা কাপড়
ভেজা শরীর
লেপ্টে গেছে সব বসন
এত জল মাঝে
জাগিছে তৃষা অতি গোপন।
স্পষ্টতর এখন তার শরীরের বাক
আমি কেবল অপলক নির্বাক
আটসাট পোশাকের শাষণ
ভেদিতে চায় তারা
শুনতে চায় না কোন  বারণ।

সদ্যস্নাত তার  মেকাপহীন মুখখানি,
তাজা ফুলে ভরা যেন নতুন ফুলদানি।

কত ভাষাহীন আলাপ হল
তৃষাতুর এই চার চোখে
পলকে পলকে মিলন হল
ভাসিলাম অসান্ত* সেই সুখে।
[অসান্ত--অসীম]

আমরা স্কুলফ্রেন্ডরা



        আজ এই হেমন্তের সকালে বন্ধুত্বের টানে, প্রাণের আকর্ষণে, অনতিদূর শৈশবের হাতছানিতে আমরা বন্ধুরা সবাই সমবেত হয়েছি। বিভিন্ন বর্ণিল হৃদয়ের উষ্ণ আবেশে আজ আমরা সবাই আবিষ্ট। ঈদের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এই মিলনোৎসব।
       আজকের এই মিলনোৎসব কে বলা হচ্ছে পুনর্মিলনী বা রি-ইউনিয়ন। এই নামগুলোর কোনটাই আমার কাছে পর্যাপ্ত বা উপযোগী মনে হচ্ছে না। (কারণ, শব্দগুলো এই অনুষ্ঠানের অর্থ/তাৎপর্য প্রকাশে অক্ষম।) পুনর্মিলনীর শাব্দিক অর্থ আবার মিলিত হওয়া, কিন্তু এটা কি আদৌ তাই? আমার মনে হয় না। আমাদের সম্পর্ক অনন্ত-অবিচ্ছেদ্য এবং আজীবনের। যে সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটে তা আসলে বিচ্ছেদ নয়। বরং আমাদের মিলনকে আরও মধুর, আরও গাঢ়, আরও দৃঢ় করার সর্বৈব প্রচেষ্টা। এটা প্রকৃতপক্ষে অন্তহীন বন্ধুত্বের অসীম পথ চলায় সাময়িক বিশ্রাম মাত্র। আমাদের বন্ধুত্বের বিরামহীন পথ চলায় মাঝে মাঝে বিরামচিহ্ন। মাঝে মাঝে পথিকের তেতুল তলে কিংবা বটের ছায়ায় ক্লান্তি জুড়ানো। একে কি বিচ্ছেদ বলা যায়?
     বন্ধুত্বের পথে বন্ধুরতা দোষের কিছু নয়। বরং তা মাংসের মাঝে সালাদের স্বাদ। টক-ঝাল-মিষ্টি আর কি। আমাদের কারও কারও মধ্যে কখনো-সখনো মনমালিন্য ঘটে, হয় সম্পর্কের অবনতি। হৃদয়ে ঘটে রক্তক্ষরণ, কাতর হই বিরহ বেদনায়। থাকতে পারি না আলাদা, আবার মিলিতও হই, বন্ধন বেড়ে গিয়ে হয় আরও দৃঢ়। হৃদয়ের মেলবন্ধনে হারিয়ে যায় আবার।
     আমাদের বন্ধুত্বের যে স্থিতিস্থাপকতা বা ইলাস্টিসিটি তা পৃথিবীতে ইউনিক। এর তুলনা নেই পৃথিবিতে। পতথিবীর সব স্থিতিস্থাপক পদার্থ মিলেও এত স্থিতিস্থাপকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। আমরা যে যেখানে যত দূরেই থাকি না কেন আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে অটুট।

 আজকের এই আনন্দঘন আয়োজন দেখে ইচ্ছে করছে স্মৃতির ভেলায় ভর করে ভেসে চলে যায় আবার স্কুল জীবনে; বাবা-মায়ের, শিক্ষকদের স্নেহমাখা শাসনে শাসিত হই আবার। স্কুল-মাঠে ছুটোছুটি করি, লাফ দিই, ঝাপ দিই, ডানা মেলে উড়াল দিই আবার। কমনরুমে মেয়েদের কলহাস্য, আর তাদের মুখে রাজ্যের গল্পের খই ফোটা,  হাসাহাসি, খুনসুটি, পড়াশুনা নিয়ে ঈর্ষাবোধ, টাকা তুলে সিংগারা খাওয়া সব আজ স্মৃতির অ্যালবামে ভরা ছবি মাত্র।

   মনে সাধ জাগছে স্কুল জীবনে ফিরে যায়, বড় স্যারের ক্লাশ ফাকি দিয়ে বাজারে গিয়ে সিংগাড়া-জিলাপী খায় মনে পড়ে শাহীন স্যারের দ্রুত গতির পাঠদান, আবহাওয়া সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী পায় না আর শহীদুল স্যারের কাছ থেকে। রহীম স্যারের সেই সরস ক্লাশে বসা আর হবে না হয়ত, কিংবা মোবারক স্যারের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাশে উপস্থিত হব না কোন দিন। বাচ্চু স্যারের কাছ থেকে ভয়েস শেখা হবে না আমাদের আর প্রেরণাও পাব না কমার্সে পড়ার। সময়ের আবর্তে সে সব কিছুই আজ স্মৃতিময় অতীত।
   স্কুলের দুটো ক্লাশ হওয়ার পর যদি কখনো হঠাত ছুটির ঘন্টা পরত তাহলে তখন যেমন খুশি হতাম আমি ( ও আমরা) তেমনই খুশি। বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছি আমি,তুই, আমরা সবাই। আবেগভরা উচ্ছ্বাশের ছটায় উদ্বেলিত আমরা। এক নৈশব্দিক ভালোলাগা কাজ করছে সবার প্রাণে। আমার সীমাবদ্ধ শব্দ ভান্ডার সেই বল্গাহীন আনন্দকে ভাষায় প্রকাশে অক্ষম। সবার চোখের তারায় তারায় এর নীরব প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি আমি।
    আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা আমি যখন ৭০ বছরের বৃদ্ধ তখনও যেন লাঠিতে ভর দিয়েই হোক আর নাতি-নাতনীর কাঁধে ভর দিয়েই  হোক এই মিলনৎসবে যেন আসতে পারি। ফিরে যেতে পারি আমার স্মৃতিময় স্কুল জীবনে।
   যে বিনা সুতার মালা রচিত হয়েছে এবং হৃদয়ের সাথে হ্রিইদয়ের যে মেলবন্ধন স্থাপিত হয়েছে তা যেন আমৃত্যু বজায় থাকে, সে কামনা করে শেষ করছি আর হ্যা আজ জারা আসতে পারে নি যে কারণেই হোক তাদেরকে ভবিষ্যতে পাব সে আশা করছি। শুভকামনায় তোদের সব সময়ের সুভাকাঙ্ক্ষী---তারিক।

(পুনর্মিলনী-২০১০ উপলক্ষ্যে পঠিত উদ্বোধনী বক্তব্য)
গাংনী,
১৮.১১.১০

আমার প্রেমের গল্প

“আজ উঠি, হাতে একদম সময় নাই।”
“না, না কী যে বলেন,আপনাদের আপ্যায়নের কথা
বহুত খুব!ভাবীর হাতের চা- ,জুড়ি নায়, তার জুড়ি নায়।
হ্যা, হ্যা, অবস্যই আসব। সময় পেলেই চলে আসব ।
আসতে আসতে ভাবীকে বিরক্ত করে ফেলবো।”
হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়লাম,চোখের কোণে সামান্য অশ্রু।
ভাগ্যিস ধরা পড়ি নি।কী ভাবতো কী জানি মি. খোশরু।
মি. খোশরু, আমার নতুন অফিসের বোস
এই হল পরিচয় তার
ভাবী হল নীলিমা, আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড
একই সেশনে একই বিষয় ছিল আমাদের দুজনার।
যাই হোক নীলিমা এখন ভালোই আছে।
ভাবী ডাকে সে বোধ হয় খুশিই হয়েছে।
শরীর আর ভাব খানা তো তায় বলে
সুখ যেন পড়ে উছলে উছলে।
সে কি ভুলেই গেছে আমার স্পর্শ আর শরীরের ঘ্রাণ?
সে বলতো আমি নাকি ছিলাম তার দ্বিতীয় প্রাণ
আমার স্পর্শ সে খুবই পছন্দ করত আগে
রাস্তায় কিংবা পার্কে খুব ঘেষাঘেষি করে চলত
এজন্য কতদিন যে বকেছি তাকে রাগে!
হঠাৎ আমার হাতের ছোয়া পেয়ে তার বুকে
মুখে থাকত দুষ্ট হাসি, তার সুখ দেখতাম চোখে।
চমকে ওঠার ভান করে ফেটে পড়ত কপট রাগে
আমি বলতাম, “হাত ধরবে, ধর।
                      চুমু খাবে, খাও।
                      তবে স্থান-কাল যেন ভুলে না যাও।”
আজ আমাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে
পরিবেশন করল কত কী
পোশাকে-অলংকারে সাজ ছিল তার বাহারী।
একবারও জানতে চাইলো না সে, কেমন আছি আমি।
আমাকে বিয়ে করলে সে হয়তো এর কিছুই পেত না
পেত শুধু চাল-ডাল-ঝাল-লবণ সময় মত না পাওয়ার যাতনা।
এখন সে সুখেই আছে (চাই, তায় থাকুক আজীবন)
গেছে বড়লোক স্বামীর গলায় লোটকে
বুদ্ধিমতি মেয়ে সে! তায় সময় বুঝে গেছে শোটকে।

হে দেশবাসী, আমরা ভালো নেই

      গতকাল পত্রিকায় ‘প্রথম আলো’র প্রথম পাতায় আমার ছবি ছাপা হয়েছে।পরিচিত বন্ধু মহলে রাতারাতি হিরো বনে গেছি।আমার ঘুম ভেঙ্গেছে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে; “আজ প্রথম আলো দেখেছিস? প্রথম আলোর প্রথম পাতায় তোর বড় একটা ছবি এসেছে।” আমি কয়েকদিন হল পত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছি। পাশের রুমে গিয়ে দেখি ঘটনা সত্য।ভয়ে জান শেষ; আব্বার ভয়, মায়ের ভয়, ভায়ের ভয়।তারপর যারা মারামারিতে জিতেছে তাদের ভয়।কারণ তারা হয় তো ইতোমধ্যে ভুলেই গেছে যে মাত্র ৬/৭ মাস আগে তারাও হাসপাতালে ছিলো আর আমি তখনও যথারীতি তাদের কে দেখতে গিয়েছিলাম।যে ফোন করে ছিলো তাকে অনেক খুশি মনে হল।তারপর সারা সকাল অনর্গল বেশ কয়েকটা ফোন পেলাম।কেউ কেউ আবার মিস্টিও খেতে চাই্লো।হল থেকে বের হচ্ছি, অনেকেই কংরাচুলেশন জানাচ্ছে।কেউ বললো ব্যপক হয়েছে আবার কেউ বললো দুর্দান্ত।ফর্ম ফিলাপ করতে ডিপার্টমেন্টে গেলাম, অনেক ফ্রেন্ডই এগিয়ে এসে হাসি মুখে হ্যান্ডশেইক করছে আর কাহিনী কি তা জানতে চাচ্ছে।যে সুশীল দাদা(ইংরেজি বিভাগের অফিস কর্মকর্তা) কে  দেখলে সবায় জড়শড় হয়ে যায়, সে হাসি মুখে আজ অনেক কিছু জানতে চাইলো, খোশ দিলে আমার কাজ করে দিল ।অনেক ক্লাশমেইটই সরু চোখে আমাকে দেখছে।যে মেয়ে কোনদিন কথা বলে নি, সেও জানালো পত্রিকায় সে আমাকে দেখেছে।রীতিমত উপভোগ করার বিষয়। কিন্তু তা পারছি না।পিছনে আমার ছুরি ধরা।           আমি রাজ্যের সংশয় নিয়ে লিখতে বসেছি এই লেখাটি।লেখাটি ছাপা হবে কি না জানি না আর যদি হয়ই বা তাহলে তার প্রতিক্রিয়ায় বা কেমন হবে?তার উপর আছে জীবনের ভয়, আত্মারাম কে চিরতরে খাঁচাছাড়া করতে খুবই ভয় হয়।খুব ভালো করেই জানি,জল বাস করে কুমিরের সাথে লড়া দুঃসাধ্য।ফি সাবিলিল্লাহ।যা আছে কপালে।
ছাত্র-রাজনীতি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয় পত্র-পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে; সেগুলো বিজ্ঞ ব্যাক্তিদের বিশ্লেষণ মূলক লেখাতে সমৃদ্ধ।মাঝে মাঝে অবস্য নামে-বেনামে-ছদ্মনামে অভিযোগ বাক্স বা চিঠি পত্র বিভাগে আমাদের সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে লেখা চিরকুট প্রকৃতির লেখাও ছাপা হয়।গত তিন-চার বছর হলে বাস করে ছাত্র-রাজনীতি সম্পর্কে আমার যে ধারণা হয়েছে তা সততার সাথে দেশ বাসির কাছে তুলে ধরতে চাই।

           প্রথমেই বলে রাখি আমি ছাত্র-রাজনীতির পক্ষে এবং ছাত্র-রাজনীতি করি, প্রয়োজন হলে ছাত্র-রাজনীতির জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত আছি।কিন্তু আমার দৃশটিভঙ্গি ভিন্ন।আমার মতে ছাত্রদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যেমন গান বাজনার,খেলাধুলার,সাহিত্যের,নাট্যদলের,স্বেচ্ছাসেবীদের প্রভৃতি সঙ্গঠন থাকা উচিত।আবার বিভিন্ন ক্লাব যেমন ডিবেটিং ক্লাব,ক্রিকেট ক্লাব,দাবা ক্লাব,বিজ্ঞান ক্লাব,অর্থনীতি চর্চা ক্লাব প্রভৃতি ক্লাব তারা খুলতে পারে।কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে তারা ব্যবহৃত হতে পারে না।ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, ছাত্রলীগসহ তথা কথিত পরপুষ্টিপ্রাপ্ত কিছু বামধারার ছাত্র সংগঠন রয়েছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।পলিটিক্যাল ভাষায় বলতে গেলে,”ফাউলদের কোন কাজ-কাম হয় না”।তারা যা করে সেগুলো কে কোন ভাবেই ছাত্র-রাজনীতি বলা যায় না।ছাত্রশিবিরের কেউ কেউ করে ধর্ম প্রচার আর বাকিরা করে ধর্ম ব্যবসা।ছাত্রদল-ছাত্রলীগ করে পা চাটা লেজুড় বৃত্তির রাজনীতি, করে ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টাকা উপার্জনের রাজনীতি,চালায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম।আর তথা কথিত বামপন্থী দল গুলো পরের টাকা খেয়ে কারণে-অকারণে জনা পনের-কুড়ি ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে করে ক্যাম্পাস পদিক্ষণ।আর বিকেল হলে অফিস গুলোতে মেয়েদের নিয়ে পাঠ চক্রের নামে করে মধুর আলাপণ।এদের কারো আজ তেমন ছাত্র সংশ্লিষটতা নেই।সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের নিজেদের এবং তাদের সংগঠনের সম্পর্ক যোজন যোজন দূরের।তারা সব এখন আউট অফ ট্র্যাক।
গত বেশ কয়েকটি মারামারির পরপরই আমি হাসপাতালে গেছি।সেখানে যেয়ে মনে হয়েছে সব দলের আহতদের হাহাকারের ভাষা প্রায় একই রকম।আর তার সাথে প্রতি বারই মার খায় এমন কিছু ছেলে যারা এর আগে জীবনে বাবা-মায়ের হাতেও চড় খায় নি।এই সব ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্ররা শুধু সীটের জন্য তাদের ধারে কাছে থাকে।মারামারির সময় জোর-জবরদোস্তি করে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়।আসল পলিটিক্যাল স্টুডেন্টসরা চালাক এবং তারা বিভিন্ন কৌশল জানে ফলে বিপদ দেখলে নিরাপদে পালিয়ে যায় আর ধরা খায় ভালো ছেলে গুলো, কম অভিজ্ঞ গুলো।হাসপাতালে তাদের অসহায় চাহনি দেখলে সীমারের চোখেও জল চোলে আসবে।
         এবারের মারামারি হয়েছে ভোরেরে স্পষ্ট আলোকে।দেখলাম একজন ছাত্র কিভাবে অপর একজন ছাত্রকে কোপ বসাতে পারে।আরও শিখলাম পড়ে গিয়ে হাত জোড় করলে কোপ মারতে হয় হাতে।আর একজন কে দেখলাম প্রকাশ্যে পিস্তুল হাতে ঘুরতে আর গুলি চালাতে।তার আগেরবার মারামারিতে দেখা গেলো একজন মাস্টার্স শেষ হতে যাওয়া ছাত্র ফার্স্ট ইয়ারের নিরীহ এক ছাত্রকে রাম দা দিয়ে কোপাচ্ছে আর পাঁচ তলা থেকে লাফ দিতে বলছে।শুধু হলে রুমের দখল নেওয়ার জন্য এত কিছু।বলি রুম গুলো কি আপনাদের বাপ-দাদার দেওয়া পৈত্রিক সম্পত্তি? যে বেদখল হয়ে গেছে বলে তার দখলে নেমেছেন আপনারা।
            ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরি।এখানের বর্তমান ছাত্র নেতাদের সাথে লালবাগ-মোহাম্মদপুর-পুরান ঢাকার ভাড়াটে গুণ্ডাদের সম্পর্ক চমৎকার।এই যেমন বোমা হারু, চাপাতি বাবু, ককটেল আব্বাস, প্রভৃতি ভদ্র মহোদয়গণের সাথে আমাদের ছাত্র নেতাদের চরম খাতির।তারা বুজুম ফ্রেন্ড(বুজাম ফ্রেইন্ড), প্রাণের দোস্ত।রেস্তরাতে তাদের সাথে একসাথে খাওয়া দাওয়া।কারণ এদের সাথে সম্পর্ক না থাকলে তো ক্ষমতার দৌড়ে তারা পিছিয়ে পড়বে।সাধারণ সিক্ষার্থীদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই বললেই চলে।সাধারণ ছাত্ররা আজকের দিনে রাজনীতি করে না।আর যারা করে তারা শুধু হলে সীট পাওয়ার জন্য বা সীট টিকিয়ে রাখার জন্য।বাকিরা যারা করে তারা ভিন্ন উদ্দেশ্যে করে।যেমনঃ
_টাকা কামানোর জন্য।হলে রাজনীতি করলে লাখপতি-কোটিপতি হওয়া সময়ের ব্যপার মাত্র।টেন্ডারবাজি ও আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি করে প্রচুর অর্থ পাওয়া যায়।
_কিছু কিছু ভালো ছাত্র রাজনীতি করে কারণ তাদের ধারণা(হয়তো বাস্তবও হতে পারে) চাকরি-বাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে গেলে ছাত্র নেতাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন পত্র পেতে হয়।
_ হলে ফাও খাওয়া যায়।এবং এই ফাও খোরদের কারণে সাধারন ছাত্ররা হলের সেই বিখ্যাত অখাদ্যগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে।হলের ক্যাটাররা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের কে বাজে খাবার খাওয়ায়।হলের ছেলেদের স্বাস্থের অবনতির অন্যতম কারণ এই নিম্নমানের খাদ্য।
_হলে থেকে ইয়াবা,গাঁজা,হেরোইনসহ নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা ঝুকিমুক্ত ভাবে করার অশেষ সুযোগ পাওয়া যায়।প্রায় প্রতি হলেই চলছে এর রমরমা ব্যবসা।এমন কি অস্ত্রের ব্যবসাও চলে এখানে।
_হলের সীট অছাত্র চাকরিজীবীদের নিকট ভাড়া দিতে পারেন ছাত্র নেতারা। এছাড়া আরো কত নোংরা কাজের সাথে তারা জড়িত তা আমি জানিও না।
ছাত্র-রাজনীতির পক্ষে চমৎকার সব রুপকথার গল্প শোনা যায়।এগুলোর উৎপত্তি আমার অজানা।দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি কবে কখন দেষের জন্য ভালো কিছু করল তা আমার জানা নেই।’৫২,’৭১ এ আমার জন্ম হয় নি তায় নিজের চোখে দেখিনি।লোক মুখে শুনেছি আর বইয়ে পড়েছি।যারা দেখেছেন তারাই ভালো জানেন যে সেখানে সাধারণ ছাত্রদের সতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কতটা ছিল।যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সাধারণ ছাত্র দলে দলে নেমে পড়েছে আন্দোলণে।বছর খানেক আগে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করতে উঠেপড়ে লেগেছিল।সাধারণ ছাত্ররাই আন্দোলণের মাধ্যমে তা রোধ করেছে।আর শিক্ষকগণ আন্দোলণ ঠেকাতে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্রদের।দুই/তিন বছর আগে আর্মির বিরুদ্ধে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী স্বেচ্ছায় নেমে পড়েছিল।তা ঠেকাতে রীতিমত জরুরী অবস্থা জারী করতে হয়েছিল। বছর আগে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ বা উন্নয়নের জন্য ছাত্র-রাজনীতির প্রয়োজন নেই।
     
         শিক্ষকগণের অবস্থাও তেমন সুবিধের নয়।তারা নিজেরা এখন আখের গোছানোতেই বেশি মনোযোগী।এই মহান পেশার লোকগুলোর অনেকেই আজ গুলিয়ে ফেলেছে তাদের লক্ষ্-উদ্দেশ্যকে বর্তমানের সুবিধাবাদী সমাজের সাথে।এখন ভিসি হন সেই কার জিহবাতে কত ধুলা আছে সেই বিচারে।নেতাদের পা চাটতে চাটতে তাদের জিহবাতে এখন কয়েক স্তর বিশিষ্ট আস্তরণ।শিক্ষকগণ নেতাদের তৈল মর্দনেই সময় শেষ, নিজেরা পড়বেন কখন?আমাদের পড়ানোর সময়ও খুব একটা পান না।আর এক দল আছে যারা ভাতার ছেড়ে নাং নাং করেই বেশি ব্যস্ত।নিজের ভার্সিটির ক্লাশ নেওয়ার সময় পান না, প্রাইভেট ভার্সিটি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।এখন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকটি মাত্র।যারা আছেন তাদের অনেকেরই অবস্থা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত।না খেয়ে, না দেয়ে অনাদরে অবহেলায় কোন রকম বেঁচে আছে;অসাড় দেহ আর জানটা কেবল ধুক ধুক করছে।এ কথা জেনে আপনারা নিশ্চয় অবাক হবেন না যে, ভার্সিটির শিক্ষক হওয়ার জন্য ছাত্র নেতাদের কাছে ধরনা দেন আর পদন্নোতির জন্য তো বটেই।
ছাত্র নেতাদের কথা আর কি বলবো, তাদের কারো কারো ছেলে-মেয়ে পড়ে স্কুল কলেজে।কেউ কেউ করে বড় ব্যবসা।চাকরি করেন অনেকেই।কেউ কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেন।আমাদের জন্মের সময় তারা ছাত্র ছিলেন আবার আমরা ভার্সিটি ছেড়ে যাব তখনও তারা ছাত্র থাকবেন ইনশাল্লাহ।আয়ুঃমান ভবঃ
     আমাদের চাওয়াঃ
_রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাত্র শাখা ছেঁটে ফেলতে হবে।এই সোনার ছেলেরাই প্রতি নির্বাচনে পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখে।তাদের সুকীর্তি গুলো হররোজ রঙ্গীন ছবিসহ ছাপা হতে থাকে পত্রিকায়।তা দেখে পাঠক হৃদয়ে জন্ম নেই এক মধুর ধারণা, “আর না।’’ তাদের জ্বালায় দেশ সদা অস্থির।
_ শিক্ষকদের পদলেহন ছেড়ে দিয়ে প্রয়োজনে ললিপপের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।পড়াশুনার পাশাপাশি ললিপপ খেতে হবে।আগের দিনে রাষ্ট্র প্রধানরা,রাজনীতিকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদধুলি নিতে আসতেন এখন শিক্ষকরা(সবায় নয় অনেকেই) যান।আগের কালচার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
_ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা রাজনীতি, শিক্ষার মানের ও পরিবেশের অবনতির পিছনে প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ ভাবে মৌলিক কারন হচ্ছে আবাসন সঙ্কট।হলের সংখ্যা বাড়াতে হবে।হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষকদের হাতে নিতে হবে।
আমি খুব ভালো করেই জানি যা আমি এখানে বলছি তা বলাটা যতটা সহজ করাটা তত সহজ নয়।কারণ যা বলছি তা বাস্তবায়িত হলে দেশে রেডিক্যাল চেইঞ্জ চলে আসবে।চেহারা একদম পালটিয়ে যাবে।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের শিক্ষা,রাজনীতি,অর্থনীতি,সংস্কৃতি প্রভৃতিতে ব্যপক ইতি বাচক পরিবর্তন সাধিত হবে।দেশের মঙ্গল চাইলে অবস্যই এমন কিছু করতেই হবে।না হলে এ জাতি তাদের শিক্ষা সংস্কৃতি হারিয়ে সোমালীয়া হয়ে যাবে।
সরকার সমীপে আবেদনঃ
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী,মন্ত্রীগণ,সংসদ সদস্যগণ আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন এখানে আপনাদেরই সন্তানেরা পড়ে।এদেশে যা কিছু ভালো অর্জতি হয়েছে তার ৯০ ভাগেরও বেশি অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলেই বাংলাদেশ নামের একটি দেশের জন্ম হয়েছিল।সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন অসুস্থ।এর দেখভালের দায়িত্ব আমার আপনার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের।একে ভালো না রাখলে যে আপনারাও ভালো থাকতে পারবেন না।আপনারা আইন করে এর প্রতিকার করুণ।কোটি কোটি টাকার কত কী যে করেন আমরা তার হিসেব নিতে যায় না,চায়ও না।আমরা ছাত্র আমাদের চিন্তা শিক্ষা কেন্দ্রিক।এত টাকার মধ্যে থেকে একটা সীমিত অংশ দিয়েই আমাদের আরও কয়েক টা হল বানিয়ে দেন।আমাদের তিন বেলা মোটামুটি মানের খাবার আর পড়াশুনা করার মত পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করে দিলেই আমরা আমরা সন্তুষ্ট।এর বেশি কিছু আমাদের চায় না।

বাউল আমার ভাই

আমাদের রক্তে হিন্দু ও মুসলমানের দুই ধারায় প্রবলভাবে প্রবাহমান;কঙ্কালে রয়েছে চেঙ্গিসের সুস্পষ্ট ছাপ।অন্য অনেক ধর্ম,বর্ণ ও জাতির সংমিশ্রণ আজকের এই বাঙ্গালী তথা বাংলাদেশি।যারা এসেছে যুগে যুগে  তারা যেমন দিয়ে গেছে ঢের ; অনেক কিছু নিয়েও গেছে ফের।আমরা কখনোই পর্যায় সারণির শেষের কলামের গ্যাস গুলোর মতো নিষ্ক্রিয় ছিলাম না।আমরা মিশুক এবং আমাদের মেশার প্রবণতা আতি প্রবল।অতিথি কে যেমন দ্রুত করে নিই আপন, স্মৃতি চিহ্ন এঁকে দিই অতি গোপন।আজকের আমরা কত রকমের বিচিত্র নকশা সম্বলিত জিন বহন করে চলেছি জিন গবেষকরাই ভাল বলতে পারবেন।আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, আমরা যারা আজ নিজেদের কে মুসললমান বলে দাবি করি তারা ৯৯.৯৯% অনারব।অমুসলিম মায়ের গর্ভেই আমার আপনার আজকের ইসলামের জন্ম।ধর্ম আমাদের ইসলাম, রক্তে আছে বাঙ্গাল।
           আর বাঙ্গালী মানেই বাংলার কৃষ্টি কালচার।সেখানে আছে হাজার বছরে ঐতিহ্য।দপের বাজনা আর তবলার বাজনা এখানে একাকার হয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে ঢোলের তালে।কত ইসলামি শাসকই মজেছে তানপুরার ধ্যানে। পর্দার অন্তরালে হেরেমের বাসিন্দারা প্রাণ জুড়িয়েছে খেপা গানে।জাত-পাত ভুলে গিয়ে মিলেছে বটের ছায়ায় বাউলের একতারার টানে।
            এদেশে বাউলের বসবাস বরাবর।কি হিন্দু যুগে কি মুসলিম যুগে; সব যুগেই তারা ছিল। সত্যযুগে দেখেছি দেবতা-মহাদেবতারা বাউল ফকির সেজে ভক্তদের পরীক্ষা নিতে আসত।আবার নবী-রাসূলগণও ঘুরে ঘুরে ইসলামের বাণী প্রচার করে বেড়াতেন।বাউলিপণা আমাদের রক্তে; শিরায়, উপশিরায়।তাই তো সুযোগ পেলেই ছুটে যায় ঘুরতে।তাহলে বাউলদের কেবল দোষ দেব? আমরাও কি মনে মনে বাউল হতে চায় না? শুধু সুযোগের অভাবে এবং সামাজিকতাকে উপেক্ষা করার অক্ষমতার কারণে সেটা পারি না।
    বাউলরা চিরকালই মানুষের ভালবাসাকে আশ্রয় করে বেচে আসছে।বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে যা পায় তাই খায়।না দিলে না খায়।মনে চাইলে গান গায়; কেউ বায়না ধরলেও না করে না; দু-এক কলি শুনিয়ে যায়।স্বভাবে খুবই নির্বিবাদি।কারো ধারেও নায় পাছেও নায়।দু-একটি ব্যতিক্রম যে নায় তা না।তবে তা হাতে গোণা।
             যারা বাউল তারা আমার ভাই, তারা আমার বাংলা মায়ের সন্তান।পাড়া বেড়ানো ওদের স্বভাব হয়ে গেছে।বকা দিলেও শোনে না।তবে তাই বলে পাড়ার আর ছেলেদের সাথে ভুলেও কখনো মারামারি-কাটাকাটি করে না। নির্বিবাদি এই আত্মভোলা বাউলদের উপর যারা হাত তুলেছে তারা হয় আরবদের নাহয় ইংরেজদের জারজ সন্তান।বাংলা মায়ের কোন বৈধ সন্তান দ্বারা এরকম মাতৃ-অভক্তি অসম্ভব;ভাইয়ের গায়ে হাত তোলাও অসম্ভব। আমরা এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বলে দিচ্ছি, নতুবা এর ফল ভাল হবে না।সব ভাই যখন জেনে যাবে, তারা নিশ্চয় সহোদরদের বাঁচাতে ছুটে আসবে; তখন কিন্তু পালাবার কোন পথ থাকবে না।
২১/০৪/১১ইং
বিঃদ্রঃ যাঁরা বড় বড় রাজনৈতিক নেতা ও ধর্মীয় নেতা, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা কি কালা-বোবা হয়ে গেলেন নাকি? না আপনাদের জ্ঞান লোপ পেলো।পরমত সহিষ্ণুতার কথা তো বলা হয়েছে, সব ধর্মেই। তাহলে কি বুঝবো রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া আপনরা কোন আন্দোলণ করেন না? এই বাস্তুভিটাহীন লোকগুলো কি আপনার রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে বলে তাদের পক্ষে কথা বলার কেও নেই? এদেশের মানুষ আছে তাদের পাশে।তারা যথা সময়ে ঠিকই এর উচিত জবাব দেবে। 

আপ লোক কোন হ্যায়?

প্রায় মাস খানেক আগের কথা, আমি এক গ্রামে আমার বন্ধুর বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম। নাশতা পর্ব শেষে শুরু হল বিয়ে পড়ানোর অনুষ্ঠান। এক দল লোক আসলো পাত্রী পক্ষে থেকে। বিয়ে পড়ানোর জন্য হুজুর ডাকা হয়ে ছিলো সে শুরু করলো এভাবেঃ
।।আপ লোক কোন হে?
।।হাম লাড়কী কা এজেন্ট হো।
।।কিয়া খবর হ্যায়?
।।সাদী কা আঞ্জাম হ্যায়।
।।লাড়কী কা নাম কিয়া হ্যায়?
।।----কা বেটী –--।
এভাবে চলতে থাকলো বিয়ের অনুষ্ঠানটি।আমি বরের পাশে বসা।হাসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।কোন রকমে মুখ চেপে বরের পাশে বশে সাহস দিতে থাকলাম।বেচারা বিয়ের জ্বালাতনে অস্থির; এমনতেই কত লোক তার দিকে চেয়ে আছে তার উপর আবার এই সব উটকো ঝামেলা।
 বিয়ের কার্যক্রম আসলেই যে কোন ভাষায় সম্পন্ন হল তা আমি বুঝ উঠতে পারলাম না;এটা হিন্দি না উর্দু না বাংলা কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। শুধু মনে হতে থাকলো; কাকের ময়ুর সাজার কাহিনী।হায় বাঙ্গালী! তোরা না পারলি উর্দু শিখতে আর না পারলি দেশের ভাষা টা শিখতে।“কামরূপেতে কাক মরেছে, কাশীধামে করে হাহাকার।’’

তোমাকে ভালোবাসি

           (যুগলদের প্রতি রইলো শুভ কামনা )

        
          এই লেখাটি পাওয়ার পর হয়তো তুমি ভাবছো কি না কী এটি। আমার বহুদিনের সঞ্চিত কথা মালার কিছু এটি। যদি তুমি মনে কর কোন আনাড়ীর স্বপ্নালেখ্য তবে তোমার কাছে হয়তো তায়, আর জেনে রেখ আমার কাছে এর থেকে সত্যি কিছু নাই।

           তোমার এক দৃশটিতে চেয়ে থাকা, বোর্ডের দিকে অথবা দূরে ...বাইরের দিকে জানালা দিয়ে, অথবা কোন অজানা দিকে...সব সবই ভালো লাগে আমার। টুনটুনি বা দোয়েলের মত  তোমার অস্থির দৃষ্টিপাত কাপুনি তোলে আমার প্রাণে।আবার কখনো হঠাৎ গম্ভীর, গালে হাত দিয়ে  চিরকালের ভাবুক হয়ে যাও।এসব কিছুই সবসময়ই ভালো লাগে আমার। কখনো বা আবার অযাথাই দাও মুচকি হাসি, তা আমার হৃদয়ে জাগায় জোয়ার। কখনও ক্লাশের ফাকে ফাকে দাঁতে নখ কাটা তুমি, এসব মুগ্ধ করে আমাকে। লেকচার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে যখন তুমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ো সে বাতাস  যে ঝড় তলে আমার প্রাণে তা কি তুমি জানো? অনেকক্ষণ চেয়ে থাকার পর খুব কষ্টে চোখের পাতা টেনে তোল তুমি, সে যে কী ভীষণ আলস্য তোমার; তুমি হয়তো জানো না আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তা কত সযত্নে দেখি আর মনে মনে কী যে খুশি হয়! তোমার কপাল জড়ো করে চাওয়া, কখনো হেসে কুটি কুটি হওয়া, সব, সব ভাল লাগে আমার। ক্লাশের ভ্যাপ্সা গরমে লেখার খাতা তুলে বাতাস খাওয়া দেখতে ভীষণ ভাল লাগে আমার।শীতে জড়োসড়ো হয়ে হাতে হাত ঘসে গালে তাপ দাও তুমি; তুমি কি জানো সে তাপ কতোটা উত্তাপ ছড়ায় আমার হৃদয়ে? কখনো তোমার ঠোঁটের কোণে হাঁসি,কখনো বা ঠোট চেপে ধরে হাসি আবার কখনো কখনো আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দোলায় আমাকে;সে হাসির বাণ বিদীর্ণ করে আমার প্রাণ। হোমওয়ার্কের কথা শুনে দাঁত-মুখ খিচিয়ে ওঠা দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে। ছল করে আড় চোখে চেয়ে দেখ আমি তোমায় দেখছি কিনা আবার না দেখার ভান করে সযত্ন অবহেলায় চুপচাপ বসে থাক তুমি; সব বুঝি আমি। আমার ভীষণ ভালো লাগে। চাতক পাখির মত তোমার অনবরত এদিক সেদিক চাওয়া, অকারণে পাশের, আগের-পিছের সহপাঠীর সাথে আলাপ জুড়ে দেওয়া, কানাকানি করা_এ সব; সব কিছু ভীষণ ভালো লাগে আমার। তোমার কারণে-অকারণে ব্যাগ হাতড়ানো, হাতের ঘড়িটা ঠিক আছে কিনা বারবার নেড়ে চেড়ে পরীক্ষা করে দেখা, বারবার ওড়না ঠিক করা, চিবুকে আঙ্গুল লাগিয়ে ধ্যানমগ্ন ভাবে লেকচার শোনা, মাঝেমাঝে দুই হাতের তালুতে গাল লুকানো,গভীর মনোযোগের সাথে বইয়ের পাতা উল্টানো-গভীর মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করি আমি।  বারবার কপাল থেকে বা মুখের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া চুল বিরক্তিভরে তোমার সরাণো দেখতে দারুণ লাগে আমার। তুমি হাসলে গালে টোল পড়ে তোমার;শুধু মুখ দিয়ে নয় , তুমি যখন হাসো ,তোমার সারা শরীরই হেসে ওঠে; তুমি হয়তো জানো না তখন তোমায় কত দারুণ দেখায়! আর তোমার অধরের নীচের ছোট্ট তিলটি নক্ষত্রের মতই জাজ্বল্যমান;আর তোমারই প্রিয় কপালের ছোট্ট কালো টিপে মনে হয়, রয়েছে যার এমন মুখখানা, তার পদনখেই আছে বোধয় কত চন্দ্রকণা।
          কথা বলার সময় তোমার কানের দুলের মৃদু স্পন্দন আমকে ভাসিয়ে নেই মেঘের দেশে।আমিও দুলতে থাকি কোন এক অজানা আনন্দে ।
অপরাজেও বাংলার বেদীতে তোমার পায়ের উপর পা তুলে বসাতে বিশেষ এক ভঙ্গী আছে যা কারও মাঝে আজও দেখিনি।সেখানে তোমার বান্ধবীদের সাথে নির্ভেজাল আনন্দময় আলাপন আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি।কখনো মধুর ক্যান্টিনে, টিএসসির বারান্দায়, কখনও বা ডিপার্টমেন্টের করিডোরে ফ্রেন্ডদের সাথে সহাস্য কোলাহল মুগ্ধ হয়ে দেখি আমি। দূর থেকে তোমার বেশি মরিচ দিয়ে ঝালমুড়ি খাওয়া দেখি; খেতে খেতে ঝালে উঃ আঃ শব্দ করা; আবার আমড়া  কিংবা কামরাঙ্গা খাওয়ার সময়  টকের তীব্রতায় চোখ-মুখ জড় করে ফেলা;সব, সব কিছু ভালো লাগে আমার।
        কখনো সাহস হয়নি তোমার কাছে গিয়ে আমার এই ভালো লাগার কথা বলার।জানি, আমি তোমার যোগ্য নয়, তায় তো আমি দূরে দূরে রই।তোমার জানার পর যদি আমায় হতে হয় বঞ্চিত, তবে আমার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হবে না।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ভালোলাগাকে আমি ধরে রাখতে চাই;বাস্তবে তোমায় পাই বা না পাই।আশা রাখি স্বপ্ন সত্যি হবে কোন একদিন।আর যদি তা না হয় তবে চাতকী যেমন অধরা চাঁদকে পাবে না জেনেও ভালোবাসে সারাক্ষণ আমিও না হয় তেমনি ভাবে তোমায় ভালোবেসে কাটিয়ে দেব আমার ছোট্ট এ জীবন।

ভালোবাসা দিবস এবং অন্যান্য

ভালোবাসা দিবস:
Valentine's Day. বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসাবে দিনটি পালিত হয়। পৃথিবীর তাবৎ প্রেমিক-প্রিমিকাগণ ব্যপক উৎসাহের সাথে দিনটি পালন করে থাকে।বন্ধু-বান্ধুবীরাও তাদের নিজেদের মধ্যে ফুল,কার্ড ও এসএমএস বিনিময়ের মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকে।এমন জন গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের প্রতি সরকারের অবহেলায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের সাথে আমিও সমব্যাথী।
সরকার দিনটির গুরুত্ব বুঝতে না পেরে বেরসিকের মত ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার দিন ধার্য করেছে।কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী রয়েছে এবের। আর তাদের বাইরে রয়েছে তাদের পরীক্ষার্থী প্রেমিকের অপরীক্ষার্থী প্রেমিকা, পরীক্ষার্থী প্রেমিকার অপরীক্ষার্থী প্রেমিক অথবা তাদের বিশেষ সুভাকাংক্ষী-সুধীজন।সব মিলিয়ে ভুক্তভুগীর সংখ্যা কোন অংশেই নগন্য নয়। পরীক্ষাটা আবার যেমন-তেমন নয় একেবারে ইংরেজি।ভালোবাসা দিবস পালন করা তো দূরে থাক পরীক্ষা শুরুর দুইদিন আগ থেকে কত লাইলী-মজনুর যে ঘটি হাতে করা লাগবে তা আল্লাহ মালুম।আমি ঐ সকল লাইলী-মজনুর এমন ঘোরতর বিপদে পাশে আছি।আমি তীব্রভাবে সরকারের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের নিন্দা জানাচ্ছি এবং এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে পুর্নবার ভাবার অনুরোধ করছি।

শোক দিবস:
আবার আর এক শ্রেণীর যুবক-যুবতী আছে যারা এই দিনটিকে বিশেষ কালো দিবস হিসাবে তথা শোক দিবস হিসাবে পালন করার দাবী তুলেছে. কয়েক বছর ধরে টিওএসসি চত্বরে ঐ বিশেষ দিনে অসংখ্য স্যাক-খাওয়া, ধরা-খাওয়া, প্রেমে ব্যার্থ যুবক-যুবতী হাজির হয় তাদের মনের গহীনে থাকা কয়লার আগুন জ্বালতে।কপালে কালো কাপড় জড়িয়ে ও কালো রঙের পোশাক পরে তাদের শোক প্রকাশ করে থাকে।এই দিন এরা কেউ কেউ গানজা(গাঁজার বর্তমান শিক্ষিত রুপ) ও মদ্যপান করে গলা ভরে গালি দিয়ে নিজের জ্বালা জুড়ায়।তারা অনেকদিন থেকে এই দিনটিকে বিশ্ব শোক দিবস হিসাবে পালন করার কথা বলে আসছে।কতৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনার দাবী জানাচ্ছি।কারণ গরীবের ব্যাথা কেবল গরীবেই বোঝে।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলণ দিবস:
কিছু বাম ঘেঁষা ছত্র-ছাত্রী ইদানীং এই দিনটিকে স্বৈরাচার বিরোধী দিবস হিসাবে পালনের দাবী তুলেছে। এই দিনে এরশাদ চাচার বিরুদ্ধে নাকি ছাত্ররা আন্দোলণ শুরু করেছিলো। চাচা এখন মুরুব্বি অতএব তাঁকে এখন ছেড়ে দেওয়া যায়।এদের সম্পর্কে আমার বিশেষ বলার কিছু নায়।

অন্যায় অভিসারে

গতকাল সন্ধ্যায়, নিজের মনেরই মন্দায়
গিয়েছিনু ঘুরতে তোমাদেরই প্রিয় জলসায়।
দেখা গেল কত যুবক-যুবতী বসে আছে;
বাহুডোরে জড়ায়ে তারা একে অপরের প্রেম যাচে।
পাশ দিয়ে হেটে গেলাম; তাকালো না কেহ
সে অবসর কোথা তাদের? যখন পাশাপাশি
রসজ রসন পিয়াসী রসাবেশী রমণ-রমণী দেহ।
অঙ্গের সাথে জড়িয়ে অঙ্গো
করিছে তারা কত যে রঙ্গো!
সুযোগ বুঝে সুকৌশলে তারা খেলিছে শৃঙ্গার-
আদি কামনায় থরথর কাপিছে অঙ্গো;
বেরসিক পাবলিক অকারণে কেবল বাড়িয়া তুলিছে *হাঙ্গার।
কামার্ত চোখগুলো সব ক্লান্ত অপেক্ষায়;
খামছে-খুবলে, চেটে-চিমটে তার জ্বালা মিটায়।
জাগাতে চায় না তবুও জাগে অঙ্গো।
যদিও জানি কেহ নাই; থাকিলেও সাধ্য নাই;
*মাগার, আমার মত কত যে *প্রুফ্রক মাগে সঙ্গো।
তৃষিত সব যৌবনবতী সীমাহীন যৌবন ভারে,
এক একটি হেলানো মন্দির; ঠেকনা হিসাবে পেয়েছে প্রেমিকেরে।
দেখে শুনে মনে হয় সব *কাতিমাসী মদ্দা আর মাদী কুকু্‌র,
অসীম তাড়নায় ক্ষেপে গিয়ে খুজে ফেরে জোড়, অবহেলে মুগুর।
[*হাঙ্গার- খুধা (ইংরেজি শব্দ Hunger)।
*মাগার-তবও।
*প্রুফ্রক- টি.এস. এলিওটের ''The Love Song of J. Alfred Prufrock'' কবিতার কথক।সে নিজের বহু সমস্যার কারণে প্রেম করতে সাহস করে না।প্রেম করার জন্য যে মানসিক শক্তি লাগে তা তার নেই।বর্তমান প্রেম ভালোবাসা ও জীবনরীতি তার কাছে সারশুণ্য ও ভন্ডামী মনে হয়।
*কাতিমাসী-কার্তিক মাসের; এই মাসে কুকুরদের মধ্যে প্রবল যৌনাবেগ দেখা যায়।এই সময় তারা ক্ষ্যাপা থাকে।]
[টিএসসি,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জিয়া উদ্যান এবং বলধা গার্ডেন ঘুরে যে চিত্র দেখেছি তার লিখিত বর্ণনা এটি ]

তুমি আজীবন অধরাই থেকো

চাঁদ দূর থেকে দেখতে কী সুন্দর! কিন্তু যতই নিকটে যাওয়া যায় ততি এর কদর্য ধরা পড়ে। চন্দ্রপৃষ্ঠে বড় বড় শুষ্ক নদী, নুড়ী পাথর, ধুলি-ধূসর উপত্যাকা। সবুজ ঘাস, লতা-পাতা, ফুল-ফল, গাছ-পালা কিছুই নেই সেখানে।কোন ভাবেই তাকে সুন্দর বলা যায় না। চাঁদ কেবল দূর থেকেই দেখতে সুন্দর। আমার প্রিয়া ঠিক তেমনি দূর থেকেই উপভোগ্য।যতই তার নিকটে যাই ততই তার অসুন্দর দিকটি প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।সে আমার জীবনে আজীবন অধরাই থেকে যাক এই আমার চাওয়া। তার কোন ত্রুটি আমি দেখতে চাই না।সে আমার কাছে অতুলনীয়, অপরিমেয়, অনন্য হয়ে থাকুক।অমিতের বন্যা যেমন দীঘির জল হয়ে রয়ে গেছে, সেও আমার জীবনে সুদূরের চাঁদ হয়েই থাকুক।

কোন এক ক্ষণে

গাছের নীচে পাতার ফাঁকে ফোটা ফোটা বৃষ্টি
ভেজা শরীর, শিরশিরে বায়ু অকারণ অনাসৃষ্টি
সবুজের নির্জনে সেদিন কেবলি দুজনে
যেন সেই অনাদি কাল থেকে বসে আছি
পাশাপাশি অতি কাছাকাছি
কোন এক আদিম আকর্ষণে
ভালবেসে হৃদয়ের উত্তাপে আনমনে।

খোকার মাইনে

মুরগীর খাঁচায় আজ ডিম নেইহারামজাদী ঠুকরিয়ে খেয়ে ফেলেছে।
মা পড়েছে ভীষণ চিন্তায়
খোকা চেয়েছে তার স্কুলের মাইনে।।

মাচায় পুঁইয়ের ডগা নেতানো,
গোড়াটা দখল করেছে বেটা পিঁপড়ার দল।
সজিনার ফুলগুলো মাটিতে ছড়ানো,
তাই ডাঁটার আশা করা কেবলি নিষ্ফল।

গাভীটির বাটে দুধ নেই, শুধু মারে লাথি,
জানা গেলো মুখ দিয়েছে হতচ্ছাড়া ডাইন-এ।
দুধ নায়, মা তায়, পড়েছে ভীষণ চিন্তায়,
খোকা আজ চেয়েছে তার মাইনে।।

মা যেদিকে তাকায়
সকিছুই ফুরিয়ে যায়
সাগরও যেন শুকিয়ে যায়।
চিন্তিত মা ভাবে,
এ দিন কবে যাবে?
এখন মাইনে ছাড়া খোকা কেমনে স্কুলে যায়?

হতভাগা কে?মা না খোকা?
হয়তো বা স্কুলই হবে...
তবে কেন মা ভাবে খামোখা?
নাকি নিয়তির দোষ পুরোটা?

নিয়তি সে তো খোদা নিজে
ছি! ছি! এ কি কুচিন্তা মা’র মনে!
সৃষ্টিকে কি কখনো কষ্ট দেয় যে সৃজে?

বুঝা গেলো, নিয়তি নয় দারিদ্র
এসব কেবলই তারই মাহাত্য!
অর্থাত, খোদা নয় এর পিছে;
মা শুধু শাঁপে তাঁরে মিছে মিছে।।

শুধু ডাক শুনি

কে যেন সদায় ডাকিছে আকুলহৃদয়ের টানেই তাই হৃদয় ব্যাকুল
কোন এক সবুজ দিগন্ত কিংবা
কোন মায়াপুরী দেয় হাতছানি
হৃদয় উছলিয়া উঠে আবেগ
শুধু একা আমি কান পেতে শুনি
একাকার হয়ে গেছে যত সব গোপন তৃষা
আমি হারিয়েছি ভাষা আর হিয়া হারিয়েছে তার দিশা।

ডিজিটাল বয়!

আঙ্গুলের ফাকে জ্বলন্ত সিগারেট
ধুয়ার কুন্ডলি পেচিয়ে উপরে ঊঠছে
আমার নাকে-মুখে-চোখে।
উত্তেজনায় কাপছে ঠোঁট জোড়া
অবসরের সময় কম
সিগারেটে দিলাম এক টান।
হাতে কলম টেবিলে ডায়েরী খোলা।
আর পাশে আছে অ্যাশট্রে খান
চেয়ে আছি আমি আত্মভোলা।
ল্যাপটপটা ওপেন, তাতে খোলা দুটি ট্যাব
সেই কখন থেকে চেয়ে আছি ড্যাবড্যাব।
একটাতে ফেইসবুক আর একটায় টুইটার
দিলাম সিগারেটে একটান সময় নেই ভাববার।
আরও খানকয় ট্যাব খোলা আছে
নাম নেব না মুখে
লোকে যদি আমাকে ভুলবোঝে পাছে।
রাত বাজে তিনটা,আমি মহা ব্যস্ত
সিগারেটে দিলাম একটান ত্রস্ত।
চ্যাটে আছে পাঁচজন,
টুইটারে ছয়জন
আর পারি না গুরু,
সামাল দেব কয়জন?
সিগারেট গেছে নিভে
বলতে পারবো না কবে।
সিগারেটে জমেছে ছাই
পড়লো এসে আমার গায়ে
ফেলতে যে খেয়াল নায়।
এখন সব কিছুই ভুল হয়
কারণ আমি একজন ডিজিটাল বয়!

গাউস স্যার

আমাদের গাউস স্যার
মাষ্টারিতে জুড়ি নেই তার।
নাম খানা অতি ভারী
পুরো নাম-গোলাম গাউস আল-কাদেরী।
চুলে দেয় বাটি ছাট
থাকে সদা ফিটফাট।
বেল্ট পরে পাজোরে
প্যান্ট হাত পায় না কোমরে
কথা বলে সজোরে।
প্যান্ট পরে ঢোললা
কথা-বার্তায় মোললা।
চুলগুলো কাচাঁ-পাকা
পোশাক পরে আঁকাবাঁকা।
করেছে সে পণ যে
বসবে না কভু বিয়েতে।
হাটে সে ধীর-লয়ে
জ্ঞানের বোঝা মাথায় নিয়ে।
সব সময় ব্যাস্ত-এই তার ভঙ্গী
বগলে দশ-বারোটা বই-এই তার সঙ্গী।
খানা-দানায় কোন মন নেই (?)
ব্যাগে তায় খানা কয় বিস্কুট-ফলমুল থাকবেই।

অন্য শরীরের ঘ্রাণ

... ... ...তবুও পেঁচা জাগে
রক্তের উৎপাদন ও স্রোত ভালোবেশে
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় জল ও ছলে ভিজে
অন্য কোন প্রাণ মাগে।
তবে এ জীবনে কেন সখেদ বিস্বাদে
প্রদীপগামী উই এর মতো
কারণে অকারণে জেগে ওঠে
বেঁচে থাকার বেদনা;
ত্যক্ত-বিরক্ত-বিষাক্ত-তেতো
দোষ কি যদি এ প্রাণ_
চেতন কিবা অবচেতনে চেয়ে বসে
অন্য কোন শরীরের ঘ্রাণ।
যখন আছে পেঁচার চেয়ে ঢের বেশি প্রাণ।

ভালবাসার ধ্বংশাবশেষ

তুমি একদিন ভাল বাসতে আমায়
আমার চোখের দিকে চেয়ে চেয়ে
কাটত তোমার অজশ্র সময়।
দিন কাটত অক্লান্ত ভালবাসায়।
এখন তোমার ক্লান্তিতে চোখের পাতা
বুজে আসে। অজাথায় ধরে মাথা।
এখন হয়ত আর ভালবাস না আগের মত
ক্ষয়ে যাওয়া প্রেমের মিথ্যা স্মৃতিচারণে
ডেকে আন অতীত স্মৃতি যত।

সাধারণের অসাধারণ সাধারণত্ব

আজ ফার্মগেট থেকে ফেরার পথে অনেক কষ্টে একটা বাসে উঠতে পারলাম। উঠে বাসের ভিতর রড ধরে এক সিটের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। শুনতে পেলাম এক মুরুববি পিছনের আর এক মুরুব্বিকে বলছে এটা বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক,৩৫ তলা,সবচেয়ে বড় দালান।পিছনের লো্কটি জানালা দিয়ে তাকালো আর গুণে গুণে দেখতে লাগলো ।আসলে সেটি ছিল ইসলামি ব্যাংক।যে লোকটি বলছে তাকে দেখে শিক্ষিত মনে হল আমার।দাড়িতে মেহেদির রঙ করা।পরে পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দশ পনের জন দাড়িওয়ালা মুরুব্বি লোক। আমি চুপ করে তাদের গল্প শুনতে থাকলাম। যে লোকটি এতক্ষণ শুনছিল সে তার পাশের লো্ককে বলছে, আল্লাহ আমাকে ২২ তালা পর্যন্ত উঠার তৌফিক দিয়ছে। তার সমস্ত মুখে  জুড়ে গৌরব আর প্রশান্তির হাসি দেখতে পেলাম। আর পাশের লোকটিকে দেখতে পেলাম ২২ তালা পর্যন্ত না উঠতে পারার ব্যর্থতায় সমস্ত মুখ হতাশায় ভরে উঠল। তার মানব জনম বৃথা গেল মনে হয়। কৌতুহলী হয়ে ব্যর্থ লো্কটিকে জিজ্ঞাশা করলাম তারা কোথায় থেকে আসছে। বলল, সিরাজগঞ্জের উল্লা পাড়া থেকে আসছে।বুঝলাম কাকরাইল যাচ্ছে। ততক্ষণে বাস শাহবাগ এসে পৌছেছে।আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে লোকটির মলিন মুখখানি বারবার মনে পড়তে লাগলো । ইচ্ছে হচ্ছিল যায় লোকটিকে ২২তালা পর্যন্ত ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। আজ যদি লোকটি মারা যায় তাহলে সে ২২ তলা পর্যন্ত না উঠতে পারার আক্ষেপ নিয়েই মরবে।
২৯/০৯/১০

স্বাধীনতার স্বাদহীনতা

স্বাধীনতার স্বাদ আজও পাইনি আমি... ... ...
খুজেছি তাকে ফার্মগেট এবং গুলিস্তানের জামে
পাইনি আমি, পাইনি যেমন
সুকান্তের রানার,তার স্বাধীনতা ঢাকা পড়েছিল কালো রাত্রির খামে
শামসুর রাহমান দেখেছিল স্বাধীনতা;
গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাতারে
আমি দেখেছি সাতার জানা কত নর-নারী;
স্বাধীনতা খুজছে কোকো-৪ এর রুদ্ধদারে।
স্বাধীনতা দেখা হয় নি আমার,
তার আগেই ডুবে মরেছে তারা ভোলার অদূরে।
স্বাধীনতা কোথায়- এই বাংলাদেশে?
যখন পোশাক-কর্মী দিনের শেষে ঘরে ফেরে সদা ত্রাসে।
চৈতী-চামেলী, সুবর্ণা-সুচন্দা, পলি-মিলি-শাহরিন
স্কুলে যায়, কলেজে যায়, ভয়ে থাকে নিশিদিন।
ছেলেধরার ভয়,
গাড়ীচাপার ভয়,
তার চেয়ে বড় ভয় ইভ-টিজে!
চির বুভুক্ষু,
শকুন চক্ষু
কুত্তারা সব টান দেয় যে কখন কামিজে!
তাইতো ওরা ওড়না দিয়ে স্বাধীনতাকে বাঁধে শিলিং ফ্যানে
নয় সান্ত, চির অনন্ত স্বাধীনতা পেয়ে যায় একটা হ্যাচকা টানে।
স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিল বিদ্রোহী নজরুল
নিঃক্ষত্রিয় বিশ্ব গড়ে শান্তি আনবে আমূল।
পারে নি সে...
ব্যর্থ হয়ে তাই সে বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল ছেঁড়ে দাঁতে
আর আমি দেখেছি স্বাধীনতার অপমৃত্যু ওপেন হেইমারের হাতে।
দাসত্ব শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীনতাহীনতা থেকে
মুক্তি পেতে চেয়েছিল রঙ্গলাল
আর আজ আমরা ঋণের বোঝা
মাথায় নিয়ে হেলায় হারায় স্বাধীনতার হাল
মুক্তিযোদ্ধারা সাগর-সমান-শোণিতের বিনিময়ে
রচেছিল যে মহাকাব্যিক স্বাধীনতা
বিরুদ্ধবাদীরা খায় নি কি তা চিবিয়ে?
‘ডিম পাড়ে হাঁসে
খায় বাঘ ডাঁসে’।
রিলিফের মাল নিয়ে এখনো হয় কাড়াকাড়ি
দুর্গত নয় বন্টনকারীদের মধ্যেই ভাগাভাগীর বাড়বাড়ি।
স্বাধীনতার স্বাদ আজও পাই নি আমি... ... ...
স্বাধীনতা হয়তো থাকে- বেহায়া ভিক্ষুকের কাছে
যে খুচিয়ে খুচিয়ে আরও দগদগে করে তার ঘা
নিষ্পাপ ছেলে অন্যের কথায় ভিক্ষুক সেজে বলেঃ
‘আমার নেই যে মা।‘
হয়তো এসব সরকার প্রদত্ত স্বাধীনতা
ভাবি অকারণ, বাড়ায় কেবল নিজের মাথাব্যাথা।
স্বাধীনতার স্বাদ আজও পাই নি আমি... ... ...
স্বাধীনতার ঝলক দেখেছিনু টিপু সুলতানের তরবারীতে
সেই তরবারী আজ হায় পড়েছে সরকারী দলের ছাত্রনেতার হাতে।
ছোটলোক হায় বড়লোক হলে, বাপ কে বলে শালা
তাদের হয়েছে একই দশা;সহসাই কাটে সহপাঠীর গলা।
স্বাধিনতার স্বাদ আজও পাই নি আমি... ... ...
স্বাধীনতা ওড়ে চাঁনখারপুলে হেরোইনচির হাতে
স্বাধীনতা ঘুমায় পলাশীর পথে, সাকুরা কিংবা পিকক-এর টেবিলে
নেশায় বুদ হওয়া বিদ্যা বোঝায় বুদ্ধিজীবীর সাথে।
ও স্বাধীনতা! তুমি দেখতে কেমন?
গন্ধ-বর্ণ কেমন তোমার? স্বাদটায় বা তোমার কি?
তিন যুগ হায় পেরিয়ে গেলো,
তবুও এখনও হায় তোমাকেই খুজছি!
স্বাধীনতার স্বাদ আজও পাই নি আমি... ... ...
তার খোজ হয়তো জানে কেবল অন্তর্যামী।

এ জন্মে পাওয়া হল না তোমায়

এ জন্মে পাওয়া হল না তোমায়
নেই কোন আফসোস তাতে
আশা রাখি পরজন্মে পাব নিশ্চয়
তোমার মুখের হাসি দেখেছি আমি
দেহের হাসি দেখতে চাই না আর
সুখেই থাকবো যদি
কেবল কল্পনায়ই যাও বার বার চুমি
ছেড়েছি আশা এ ধরায় তোমাকে পাবার
আমার চাওয়া হোক কেবলি চাওয়া
আজীবন ধরে আরাদ্ধ হোক তোমাকে পাওয়া
যদি এ জন্মে তুমি হও অন্য কারো
জানি সে শুধু আমারই জন্য
প্রস্তুতি নিতে এসেছো তুমি
জানি তোমার এটা রিহার্সেল শুধু
শুধু আমাকে পাবার জন্যই
পরজন্মে আসবে তুমি
আমার এ জীবনের সাধানার স্বিদ্ধি হয়ে
তারই অপেক্ষাই আমি রইলাম চেয়ে।

সে আমাকে বলেছিলো

''হ্যা,আমি তোমার সেই অপ্সরি
বাস্তবে নয়,কেবল কল্পনারি।
হয়ত দেখেছিলে মরে
ঝিমুনিতে বা কখন নেশার ঘোরে।
শুধু এটুকুতে,
আমাকে যে ভালোবাসা দেখালে-
হয় কি তুলোনা তার কোনকালে?
আমাতে তোমাতে যে অশরীরী ভালোবাসা
জগতের সকল শরীরী যুগলে পাক তার ভাষা।''